ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আচারভিন্নতা
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ জানান, নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যারা ধর্মান্তরিত হননি, তারা কমবেশি সবাই সনাতন ধর্ম পালন করেন। তবে তাদের দুর্গাপূজার আচার-অনুষ্ঠান বাঙালি হিন্দুদের থেকে কিছুটা ভিন্ন। যেমন– কোথাও ব্রাহ্মণ পুরোহিতের বদলে নিজেদের সম্প্রদায়ের পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করেন, কোথাও আবার প্রতিমার পোশাক বা পূজার ধরণে নিজস্ব সংস্কৃতির ছাপ থাকে।
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী
বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার ত্রিপুরা বাস করে, যাদের অধিকাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামে। আগে তারা দুর্গা প্রতিমায় শাড়ি পরাতেন, এখন পরান রিনাই-রিসা, যা ত্রিপুরা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। পূজার মন্ত্রপাঠও এখন অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের পুরোহিত দিয়ে সম্পন্ন হয়।
হাজং সম্প্রদায়
হাজংরা মূলত ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুরে বসবাস করেন। তাদের কাছে দুর্গাপূজা প্রধান উৎসব নয়, তবে তারা নিজস্ব আচার অনুযায়ী পূজা করেন। হাজংদের প্রধান উৎসব হলো দেউলী পূজা, যা ধান কাটার মৌসুমে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কাদা খেলা, পানি খেলা ইত্যাদি তাদের বিশেষ সাংস্কৃতিক রীতি।
বানাই ও পাত্র জনগোষ্ঠী
বানাই নৃগোষ্ঠীও একসময় প্রকৃতি পূজারী ছিল। পরে তারা দুর্গাপূজা শুরু করে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাজসজ্জা ও আচার-বিধিতে পরিবর্তন এসেছে।
পাত্ররা সিলেট অঞ্চলে বসবাস করেন। তাদের দুর্গাপূজা 'খেমুং লারাং' নামে পরিচিত এবং এতে সংস্কৃত মন্ত্র নয়, মাতৃভাষায় প্রার্থনা করা হয়। তারা পূজায় হাঁস বলির প্রথাও পালন করে।
অন্যান্য নৃগোষ্ঠী
ওরাওঁরা মূলত প্রকৃতি উপাসক হলেও দুর্গার ‘দুর্গতিনাশিনী’ রূপের পূজা করেন। কোচদের মধ্যে দুর্গাপূজার পাশাপাশি কালী ও সরস্বতী পূজার প্রচলন রয়েছে।
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশে দুর্গাপূজা শুধু বাঙালি হিন্দুদের জন্যই নয়, বহু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কাছেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক উৎসব। সময়ের সাথে সাথে তাদের আচার-অনুষ্ঠানে বাঙালি হিন্দুদের পূজার ধরণ যুক্ত হলেও প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী এখনো নিজস্ব সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে।
No comments:
Post a Comment