দেশে গণতন্ত্রের সত্যিকারের চর্চা থাকলে সাম্প্রদায়িকতা থাকতে না পারত—এমন মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা। তারা বলেন, কক্সবাজারের রামু থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া পর্যন্ত যে সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোর কোনোটিই বিচার হয়নি; যদি শুরু থেকেই দুর্বৃত্তদের বিচার করা হতো, তাহলে বাংলাদেশের চেহারাই ভিন্ন হতো।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট আয়োজিত ‘আসন্ন দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় নেতারা এসব মন্তব্য করেন।
জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (একাংশ) মুখপাত্র ও নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে লিখিত বক্তব্যে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন—শারদীয় দুর্গাপূজায় সরকারি ছুটি তিন দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী); প্রতিটি স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্দিরে সরকারি খরচে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও পূজা চলাকালীন নিরাপত্তা জোরদার; গত বছরের মতো দুর্গাপূজায় সেনাবাহিনীর টহল; এবং কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটরিং সেল গঠন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আসলাম চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘু–সংখ্যাগুরু এই বিভাজন আপেক্ষিক। আমাদের নাগরিকদের বিশ্বনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে; সবাইকে নিয়ে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা প্রয়োজন।
সবাই যেন নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করতে পারে এবং সমান নাগরিক অধিকার পায়—এটাই উদ্যোগ হওয়া উচিত।
গণফোরাম ও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, কক্সবাজার রামু থেকে গঙ্গাচড়া—এ ধরনের ঘটনার কোনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে; প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান ও মঠ-মন্দির-মাজারে হামলা ত্বরান্বিত হচ্ছে; এতে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর মন্তব্য করেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যাপক ত্যাগ-তিতীক্ষা রয়েছে; তবু ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুর যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে।
এসব ঘটনায় শুরু থেকেই দুর্বৃত্তদের বিচার হলে দেশের চেহারা আলাদা হতো। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত—এটি একটি দুঃস্বপ্নের মতো।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার—কিন্তু এ কথার বাস্তবায়ন হয়নি। এই সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শতশো ঘটনার মতো সহিংসতা ঘটেছে; বিচার হয়নি। আমরা সবাই মিলে সুন্দর, সহনশীল পরিবেশ চাই।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাস বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ সব মানুষের; তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সকলের কথা শোনার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও সভাপতিত্ব করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায়; বক্তব্য রাখেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সন্তোষ দাশগুপ্ত (অমিথ), হিন্দু মহাজোটের রকি বড়ুয়া প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment