বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ


Breaking

Friday, September 26, 2025

তুমুল আলোচনায় দেশের প্রথম পাটের তৈরি প্রতীমা



 

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো সাতক্ষীরার মৃৎশিল্পীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরিতে। রংতুলি আর হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রতিমা সাজাচ্ছেন তারা।
এবার সাতক্ষীরা জেলায় ৫৯১টি পূজামণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে নজর কেড়েছে কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি পালপাড়ার পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি প্রতিমা। সোনালি আঁশে মোড়ানো দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর ও মহিষাসুরসহ ১২টি প্রতিমা যেন এক অনন্য শিল্পকর্ম। আলোয় ঝলমলে এই প্রতিমাগুলোতে রঙের ব্যবহার কম, তবে পাটের প্রাকৃতিক আভাই এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
প্রতিমা নির্মাতারা জানান, গত ২১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া টানা ২১ দিনের পরিশ্রমে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়। কাঠ, বাঁশ, মাটি ও পাট দিয়ে কাঠামো তৈরি করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রমে আঁশ বসানো হয়েছে। শুধু আঁশ বসাতেই লেগেছে পাঁচ দিন। এ বছর প্রতিমা তৈরিতে প্রায় ৫০ কেজি পাটের আঁশ ব্যবহার হয়েছে। আয়োজকরা দাবি করেন, বাংলাদেশে সোনালি আঁশ দিয়ে প্রতিমা তৈরির এটি প্রথম উদ্যোগ। এর আগে ২০২৩ সালে চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে প্রতিমা তৈরি করে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল।
পালপাড়া পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুমার পাল জানান, ১৯৯৫ সাল থেকে এখানে পূজা হয়ে আসছে। ভিন্ন আঙ্গিকে প্রতিমা তৈরি করে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য। প্রতিমা তৈরিতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে, যা বহন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবাসীরা। সরকারি সহায়তাও পাওয়া গেছে।
দর্শনার্থীরা বলছেন, পাট দিয়ে প্রতিমা এত সুন্দরভাবে তৈরি হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সোনালি ঝলক সত্যিই চোখ ধাঁধানো, যদিও খরচটা একটু বেশি হয়েছে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজা, আর ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব। শাস্ত্রীয় পণ্ডিতদের মতে, এবার দেবী দুর্গা আসবেন গজে (হাতিতে) এবং ফিরবেন দোলায় চড়ে।
এদিকে সাতক্ষীরার সব পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পুলিশি টহল এবং তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, পূজা নির্বিঘ্ন করতে কঠোর নজরদারি থাকবে। গুজব বা অপপ্রচার ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে থাকবে বাড়তি নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবারও আনন্দঘন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সব ধর্মের প্রতি সম্মান রেখে উৎসবকে সফল করতে প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও বিজিবি একসঙ্গে কাজ করবে।

No comments:

Post a Comment

"
"