রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ২৮ অক্টোবর যে ‘সংঘাতপূর্ণ’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে শঙ্কায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এমন দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির ভাষ্য, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিদারুণভাবে উদ্বিগ্ন। এমন রাজনৈতিক সহিংসতার সুযোগ নিয়ে দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার জন্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হয়।
বুধবার (১ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংগঠনটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এসব কথা তুলে ধরেন। ঐক্য পরিষদের সভাপতি নীম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু মহাজোটের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ডা. এম কে রায়, ঐক্য পরিষদের সদস্য রঞ্জন কর্মকার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে ‘বিশেষ মহল’ যেন কোনো ধরণের ধর্মীয় ও জাতিগত নিপীড়ন -সহিংসতা চালানোর ‘অপপ্রয়াস’ করতে না পারে সেজন্য সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল ও সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
ঐক্যমোর্চার সমাবেশ ১৭ নভেম্বরলিখিত বক্তব্যে রানা দাশগুপ্ত বলেন, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে যে নির্বাচনী ইশতেহার আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছিল সে ইশতেহারের ৩.২৯ অনুচ্ছেদে বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকার ছিল। এগুলো হল-
অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্ত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা এবং সুযোগ সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ঐক্যমোর্চা।
বিষয়টি জানিয়ে এ মোর্চার সমন্বয়ক রানা দাশ গুপ্ত বলেন, আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটানা ৪৮ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি পালন করি। এসময় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান, প্রাক্তন মন্ত্রীপরিষদ সচিব জনাব কবির বিন আনোয়ার সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের বরাত দিয়ে অনশনকারীদের আশ্বস্ত করেন।
এসব বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে বলে জানান। তার আশ্বাসের ভিত্তিতে পরবর্তীতে পূর্বনির্ধারিত ৬ অক্টোবরের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০২৩ পুনঃনির্ধারণ করা হয়। বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে ঐক্যমোর্চার ৪ নভেম্বরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী সমাবেশের তারিখ ১৭ নভেম্বর পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
সংগ্রহঃ www.bhorerkagoj.com
No comments:
Post a Comment